গুনী শিক্ষক সম্মাননা পেলেন আনওয়ারুল হক

 

মনিরুজ্জামান ঃ

মোহাম্মদ আনওয়ারুল হক। আনোয়ার স্যার নামেই যিনি ভোলায় সমধিক পরিচিত ছিল। তিনি শিক্ষক নয়, ছিলেন জ্ঞানের বাতিঘর। মোমবাতির আলোর মতো নিজে জ্বলে অসংখ্য পরিবারকে আলোকিত করেছেন। নিজের পরিবার রেখে স্কুল ও ছাত্রদের নিয়ে যার কাটতো সোনালি দিনগুলো। তার জ্ঞানের ইলেকট্রন গ্রহণ করে অনেকই আজ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত। স্নেহ আর ভালোবাসার পরম মমতায় আপন সন্তানের মতো করে দেখতেন শিক্ষার্থীদের। স্কুল আর শিক্ষার্থী ছিল তার কাছে উপাসনালয়ের মতো। নিজের সংসারের প্রতি বেশ উদাসিনই ছিলেন মহান এ-ই শিক্ষক।এই গুনী শিক্ষক কে শুক্রবার সম্মাননা দিলেন একটি সামাজিক সংগঠন ।
মহান এ মানুষটি ১৯৩৯ সাল ছোট মানিকা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বরিশাল বি,এম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেন তিনি। এরপর চট্টগ্রাম ওয়াজেদিয়া স্কুল এন্ড কলেজে যোগ দিয়ে শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে নিয়ে তিনি চাকুরী জীবন শুরু করেন।এরপর লালমোহন বালিকা বিদ্যালয়ের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক।তার অক্লান্ত শ্রম আর মেধা দিয়ে প্রতিষ্ঠান টিকে পূর্ণ যৌবনে রুপ দেন। এছাড়া ও তিনি লালমোহন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।জীবনের বেশি সময় তিনি সেখানে ব্যয় করেন। প্রত্যন্ত অঞ্চল দেউলা রজ্জব আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তিনি প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। শিক্ষার হার প্রসারে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।ওই এলাকার মানুষের মুখে আজও তার ভূমিকার কথা শুনা যায়। রজ্জব আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দূস জানায়,স্যার আমাকে বাড়ি থেকে ধরে এনে এখানে চাকুরী দেন।তার বিশ্বাস ছিল এলাকার শিক্ষা বিস্তারে এলাকার মানুষই বেশি ভূমিকা রাখতে পারবেন।টাকার জন্য কেউ ফরম ফিলাপ করতে পারেনি এমন নজির ছিলনা স্যারের কর্মময় জীবনে।আমি ও বর্তমানে স্যারের সেই আদর্শ ধরে রাখার চেষ্টা করছি।সর্বশেষ তিনি বোরহানউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। এছাড়া ও তিনি বোরহানউদ্দিন সরকাবী আব্দুল জব্বার কলেজ ও বোরহানউদ্দিন মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্নে তিনি অবৈতনিক শিক্ষক হিসাবে অনেক দিন ক্লাস নেন।বর্ণাঢ্য এই কর্মময় জীবনে তিনি অনেক শিক্ষার্থীকে মানুষ করেছেন শুধু তাই নয়।তিনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলো,কালো থেকে সাদা,অনুচিত থেকে উচিত, মিথ্যা থেকে সত্যের পথের সারথি করছেন।ধর্মীয় অনুশাসন তিনি যেমন কঠিন ভাবে মেনে চলতেন তার শিক্ষার্থীদেরকেও তিনি একই শিক্ষা দিয়েছেন।তিনি ছিলেন সত্য,সঠিক ও ন্যায়ের পথের এক আদর্শিক মানুষ।নৈতিকতার কক্ষপথ থেকে জাগতিক কোন মহাকর্ষন শক্তি তাকে বিচ্যূত করতে পারেনি মৃত্যূর পূর্ব দিন পর্যন্ত। বিধাতা আপন হস্তে পুরুস্কৃত করেছেন জ্ঞানের এই বাতিঘর কে।ছেলে মেয়েরা আজ নিজ নিজ জায়গায় সুপ্রতিষ্ঠিত। কথা হয় এ শিক্ষাগুরুর বড় ছেলে বোরহানউদ্দিন মহিলা কলেজে গ্রন্থাগারিক কর্মরত মোঃ জাকির হোসেন এর সাথে।তিনি জানান বাবার কাছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ছিল সংসার।অনুযোগের সুরে বলেন,বাবার অনেক সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছি।তাতে কোন দুঃখ নেই।বাবার কল্যানে অনেকে মানুষ হয়েছে,অনেকে সঠিক পথের পথিক হয়েছে এটা ভেবেই আমরা আনন্দ পাই।তার কনিষ্ঠ সন্তান মোঃ জাহিদ হোসেন বর্তমানে একজন শিল্পোদ্যোক্তা। গরীব ও অসহায় মানুষকে পেলে সাধ্যমতে উপকারের চেষ্টা করেন। মসজিদ মাদরাসা ও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে দান অনুদানে পিছিয়ে নেই।আর জাকির হোসেন কারো বিপদের কথা শুনলে দৌড়ে সবার আগে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।কারো মৃত্যুর সংবাদ শুনলে শত ব্যস্ততার মাঝে দাফন কাফনে উপস্থিত হবেন।
ব্যক্তি জীবনে তিনি ২ ছেলে ও ৬ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন।
১৯৯৬ সালের ২ মে এ নক্ষত্র বিধাতার ডাকে সারা দিয়ে তার আলো বিতরণ বন্ধ করেন।