কালর্ভাটের বেহাল দশায় জন দুর্ভোগ চরমে

মনিরুজ্জামান ও জেএম মোমিন ঃ
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার দেউলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডস্থ চরটিটিয়া গ্রামে আদ্দীর বাড়ীর দরজার জামে মসজিদের উত্তর পাশে অবস্থিত কার্লভাটটির আজ বেহাল দশা। ভোগান্তির সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে এলাকাবাসির।
জরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, স্থানীয় মজম বাজার হতে চরটিটিয়া গ্রামে যাওয়ার প্রধান সড়ক এটি। যা দিয়ে দেড় কিলোমিটার সামনে এগুলেই দেখা যায় আদ্দীর বাড়ী নামক এলাকার জামে মসজিদের উত্তর পাশে খালের উপরে র্নিমিত কার্লভাটটির ঢালাই নেই আছে শুধু রড। যেখান দিয়ে প্রতিদিন স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, শিক্ষাথর্ী এবং নানা শ্রেণী পেশার প্রায় ৪ হাজার লোক যাতায়াত করে। কার্লভাট পাড়া পাড়ের সময় প্রতিনিয়তই তারা পড়ছেন মহা বিপদে। বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী, বয়স্ক লোক এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়–য়া শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয় বাসিন্দা ফজর আলীর ছেলে আবুল হোসেন (৭৩) জানান, প্রায় ২৮ বছর পূর্বে খালটির উপর কার্লভাটটি নির্মান করা হয়। এটি অনেক পুরানো হয়ে যাওয়াতে গত ৭ বছর আগে থেকে এর ঢালাই ঝড়ে পড়া শুরু হয়। যার ফলে আজ এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ৭৫ বছর বয়স্ক কুট্টি মিয়ার ছেলে আ:রশিদ বলেন, আমরা বুড়ো মানুষ হওয়াতে এখান দিয়ে পাড় হয়ে ঠিক মতো মসজিদে যেতে পারিনা। এবং সঠিক সময়ে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারি না। এখান দিয়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে আমি কয়েক বার আহত হই।
তাছাড়া ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা, আ:মতলেবের ছেলে মোছলেম (৬৫), কয়ছের মিয়ার ছেলে নান্নু (৪৫), কালামের ছেলে ইয়াছিন (৫৩) সহ আরো অনেকেই জানান, এক সময় আমরা সাঁকো দিয়ে এই স্থানটি পাড় হতাম তারপর এখানে একটি কার্লভাট নির্মান করা হয়। কিন্তু আজ এ পরিস্থিতি আমাদের সে কথা মনে করিয়ে দেয়। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আমরা এই ভোগান্তির শিকার। গত কোরবানির ঈদের কয়েকদিন আগে আমাদের প্রতিবেশীর একটি গরু এখানে পড়ে গিয়ে পা ভেঙ্গে যায় । পরে উদ্ধার করে সেটি জবাই করা হয়। এখানে প্রতিনিয়তই কোন না কোনো দূর্ঘটনা ঘটেই চলছে। তারা আরো জানায়, আমাদের এলাকার কেউ অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে আমাদের অনেক বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। রাস্তা এবং কার্লভাট খারাপ থাকায় এখানে কোনো গাড়ি আসতে পারে না। রোগীকে কাদে করে নিতে হয়। আমাদের দাবি অতি দ্রুত যেন এখানে একটি কালভার্ট ও এখানের প্রায় ৬ কিলোমিটার কাচাঁ রাস্তা পাকা করা হয়।
তবে সবচেয়ে ভোগন্তিতে আছেন এখানকার স্কুল,কলেজ এবং মাদ্রাসায় পড়–য়া শিক্ষাথর্ীরা। এদের মধ্যে লালমোহন শাহবাজপুর সরকারি কলেজে অধায়ণরত এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র সোহাগ জানায়, আমি প্রতিদিন কার্লভাটিটি পাড় হয়ে কলেজে যাই। প্রায় ১ মাস আগে এখানে পড়ে পায়ে প্রচন্ড আঘাত পাই যার কারনে ১ সপ্তাহ পর্যন্ত ক্লাশ করতে পারিনি।
এছাড়া একই এলাকার ৭ম শ্রেণীর ছাত্র লোকমানের ছেলে তানজিল,৩য় শ্রেণীতে পড়া সবুজ ও স্বপ্না এবং ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র ফজলে রাব্বি বলেন, আমরা প্রতিদিন স্কুল মাদ্রাসায় যাওয়ার সময় ও আসার সময় এখানে এসে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় খুব ভয় পাই। তাই সকালে বাড়ী থেকে আসার সময় আব্বা আম্মু বা অন্যরা আমাদেরকে কার্লভাটটি পাড় করিয়ে দেন। আবার ছুটির পর বাড়ী আসার সময় অন্যদের সহোযোগীতায় আসতে হয়। আমরা প্রতিনিয়তই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। আমাদের দাবি আমরা যাতে সুন্দর ভাবে পড়াশোনার জন্য বিদ্যালয়ে যেতে পারি সেজন্য যাতে পূনরায় কার্লভাট নির্মান করা হয়।
পার্শ্ববর্তী মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল বলেন,কার্লভাটি পাড় হওয়ার সময় অনেকে পথচারীই সেখানে পড়ে যান। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে অপরিচিত অনেক লোক এসে এখানে দূর্ঘটনার শিকার হয়েছে । আমি মাঝে মাঝে অনেককে উদ্ধার করে থাকি। ঢালাই পড়ে যাওয়া রডের উপর স্থানীয়রা আসা যাওয়া করার জন্য সুপারি গাছ দিয়ে সাঁকোর মতো তৈরি করেছেন।
এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবুল মুঠোফোনে জানান, আমি কয়েক দিন যাবত খুব অসুস্থ । এব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। কেউ আমাকে বলেও নি।
অপর দিকে উক্ত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান জানান, সত্যি এটি একটি মরণফাঁদ । কালর্ভাটি দুটি গ্রামের মধ্যস্থলে হওয়া এটার দিকে কারো তেমন খেয়াল নেয়া হয়নি। আমি কালর্ভাটটি দেখে এসেছি। আমি একজন মেম্বার হিসেবে আমাদের চেয়াম্যানকে এবং সংশ্লিষ্টদের কে জানাবো দেখি তারা কি পদক্ষেপ নেন।