নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে জেলেদের আর্থিক সহায়তা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের সুপারিশ

নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে জেলেদের আর্থিক সহায়তা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের সুপারিশ

ঢাকা: বঙ্গোপসাগরে এবং ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় জেলেদেরকে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান সুপারিশ করা হয়েছে । ১৪ সেপ্টেম্বর শনিবার অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এসব সুপারিশ তুলে ধরেন উপস্থিত বক্তারা । মাছ ধরতে না পারলেও জেলেরা যেন সংসার চালাতে পারেন সে জন্য জেলেদের বিকল্প আয় নিশ্চিত করার প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেন তাঁরা। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ মৎস্যশ্রমিক জোট সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা: উপকূলীয় প্রান্তিক জেলেদের উপর প্রভাব পর্যালোচনা’ শীর্ষক এই সেমিনার আয়োজন করে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এবং ড্যানিশ ইন্সটিটিউট ফর হিউম্যান রাইটস এই সেমিনার আয়োজনে সহযোগিতা করে।
কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু এমপি। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সাইদ মো. রাশেদুল হক, এতে বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এবং মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সামুদ্রিক মৎস্য) ড. মো. আবু হাসনাত। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক মো. মজিবুল হক মনির। এতে আরও বক্তব্য রাখেন মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শওকত কবির চৌধুরী, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার রফিকুল ইসলাম, পাবলিক সার্ভিস ইন্টারন্যাশনাল হাফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশে কৃষক ফেডারেশনের বদরুল আলম এবং বরগুনা, কক্সবাজার, ভোলা থেকে আগত মৎস্য শ্রমিক, জেলে এবং নৌকার কয়েকজন মালিক।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে মো, মজিবুল হক মনির বলেন, মৎস্য সম্পদ রক্ষা, বিশেষ করে ইলিশ রক্ষায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ফলে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। তবে এসব নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে মাছ ধরতে না পারায় এবং বিকল্প কোনও আয়ের সুযোগ না থাকায় প্রান্তিক অনেক জেলেকেই সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। সরকার প্রতি মাসে নিবন্ধিত প্রায় ৪ লাখ জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দিচ্ছে, কিন্তু অনেক জেলে এখনো নিবন্ধনের বাইরে রয়ে গেছে। চালের পরিবর্তে নগদ আর্থিক সহায়তা এক্ষেত্রে অধিকতর কার্যকর হতে পারে।
কক্সবাজার মৎস্য শ্রমিক জোট নেতা মিজানুর রহমান বাহাদুর বলেন, দেশের সম্পদ বৃদ্ধিতে মাছ ধরায় যে নিষেধাজ্ঞার উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই, কিন্তু দরিদ্র জেলে পরিবারগুলোকে সঠিকভাবে বাছাই করে, তাদের সংসার চালানোর জন্য প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। ভোলা ট্রলার মালিক সমিতি সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা নিষেধাজ্ঞা মেনে সাগরে না গেলেও, ভারতের জেলেরা এই সময় আমাদের এখানে এসে প্রচুর ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাই নিষেধাজ্ঞার সময়কাল পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সংগতি রেখে করতে হবে। বরগুনা মৎস্য শ্রমিক প্রতিনিধি এস এম জাকির হোসেন বলেন, অনেকে জেলে না হয়েও জেলে কার্ড পেয়েছে। জেলে কার্ড সংশোধন করে প্রকৃত জেলেদেরকে কার্ড দিতে হবে।
দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলেদের জন্য, বিশেষ করে মৎস্য শ্রমিকদের জন্য একটি ন্যুনতম মজুরি প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
ড. মো. আবু হাসনাত বলেন, বিশাল সমুদ্র বিজয়ের সুফল পেতে হলে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞার সুফল বাংলাদেশ পাচ্ছে, কিভাবে প্রান্তিক জেলেদের সম্পৃক্ত করে এই নিষেধাজ্ঞা আরও সফল করা যায় এ বিষয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
আবু সাইদ মো. রাশেদুল হক বলেন, নিষেধাজ্ঞাগুলো দেওয়া হয় জেলেদের স্বার্থকে বিবেচনা করেই। কারণ মৎস্য সম্পদ বাড়লে জেলেরাই উপকৃত হবেন সবার আগে। আমরা সমুদ্র সম্পদকে কিভাবে দেশের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছি, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করছি।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, উপকূলীয় জেলেদের সন্তানদের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে, এটা তাদের বিকল্প আয় ও কর্মসংস্থানের দোয়ার খুলে দেবে।
শাহীন আনাম বলেন, আমাদেরকে মৎস্য সম্পদ রক্ষা করতে হবে, এই সম্পদ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি এটাও দেখতে হবে যে, এই সম্পদ বাড়ানোর পরিকল্পনায় যেন সবার সম্পৃক্ততা থাকে, কেউ যেন এর কারণে পিছিয়ে না পড়ে। তবেই কেবল এই উদ্যোগ টেকসই হতে পারে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু এমপি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে ইলিশের উৎপাদন কমলেও বাংলাদেশে বাড়ছে। এই উৎপাদন বাড়াতে বঙ্গোসাগরকে আমাদের নিরাপদ-দূষণমুক্ত রাখতে হবে। সমুদ্রে চলাচলকারী প্রায় ৬০ হাজার জাহাজের কারণে সমুদ্র দূষিত হচ্ছে, এটা আমাদের মৎস্য সম্পদের জন্য বড় হুমকি।