পটুয়াখালীতে পুলিশ সুপারের সহযোগীতায় ৮ বছর পর সন্তানকে ফিরে পেল ‘মা’

স্টাফ রিপোর্টর, মু. জিল্লুর রহমান জুয়েল, পটুয়াখালী।

কষ্টেভরা আহাযারিতে বিলকিস বেগমের জীবন কাহিনী । ১৯৯৭ সালে বিয়ের পর কোল জুড়ে আসে একুব ছেলে ও এক মেয়ে। কিন্তু বিয়ের দশ বছর পর ২০০৭ সালে স্বামী রুহুল আমিন তাকে ডিভোর্স দেয়।

২ সন্তানের মা বিলকিস বেগম অথৈই সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। অন্যকোন উপায় আপায় না পেয়ে পাড়ী দিলেন বাবার বাড়ী। বাবার গ্রামের বাড়ী হল বরগুনার জেলার আমতলী উপজেলার দক্ষিণ টেপুরা গ্রামে পিতাঃ মৃত্যুঃ মতিউর রহমান সেখানেই চলে আসেন।

কিন্তুু সেখানেও বাবার অভাব অনাটনের সংসারে বেশী দিন থাকা সম্ভব হল না তার। দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার তুরাগ থানাধীন বাউনিয়া এলাকায় বড় বোনের কাছে পাড়ী জমায় তিনি।

তখন ছেলে মহিদুলের বয়স মাএ ০৭ বছর আর মেয়ে তামান্নার বয়স ০৪ বছর। নিজে মানুষের বাসায় কাজ করে ছেলে মেয়েদের খাদ্য সংস্থান করতে না পেরে মেয়েকে গ্রামে নানির কাছে বরগুনা পাঠিয়ে দেন এবং ছেলেকে তুরাগ এলাকায় একটি হাফেজী মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। ২০১২ সালে তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। হঠাৎ একদিন খবর পান ছেলে মহিদুল মাদ্রাসা থেকে পালিয়েছে। সন্তান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন বিলকিস বেগম।

সন্তানের সাথে হারিয়ে যায় তার সুখের স্বপ্ন। সম্ভাব্য সকল জায়গায় খুঁজেও ছেলেকে না পেয়ে ডিএমপি’র তুরাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন যার নম্বর- ১৯, তারিখ ২৬/০২/২০১২। সন্তানকে হারিয়ে চোখের জলে কাটে বিলকিস বেগমের প্রতিক্ষার ০৮ টি বছর।

এদিকে ছেলে মহিদুল ঢাকার ঐ একঘেয়েমী জীবনের অবসান ঘটিয়ে কাউকে কিছু না বলেই তার গ্রামের বাড়ীতে আসার জন্য পালিয়ে সদরঘাট আসে। সেখান থেকে পটুয়াখালীগামী লঞ্চে ওঠে। কিন্তু ০৭ বছরের মহিদুল না জানে নানা বাড়ির ঠিকানা, না জানে ঢাকায় মায়ের ঠিকানা। বিপদে পড়ে যায় মহিদুল।

লঞ্চে তার সাথে পরিচয় হয় মোঃ মকবুল আহম্মেদ নামক মহান এক ব্যক্তির সাথে। তিনি প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করেন। জনাব মকবুল শত চেষ্টা করেও মহিদুলের ঠিকানা সনাক্ত করতে না পেরে তাকে তার নিজের বাড়ীতে নিয়ে আসে এবং মকবুলের বাড়ীতেই আদর যত্নে বেড়ে উঠতে থাকে মহিদুল।

ঐ স্কুল শিক্ষক জনাব মকবুল হোসেনকে মহিদুল নানা বলে ডাকতেন। শিক্ষক মকবুল হোসেন অবসর গ্রহণের পর বিগত ০৪ বৎসর পূর্বে পটুয়াখালী কোর্টের পাশে মহিদুলকে একটি ফটোকপির দোকান করে দেন। সেখানেই কলেজ প্রভাষক মাওলানা আর আই এম অহিদুজ্জামান এর সাথে পরিচয় হয় মহিদুলের।

যানাযায়,গত কয়েকদিন আগে মহিদুল তার সব ঘটনা প্রভাষক জনাব অহিদুজ্জামানকে খুলে বলে এবং মা’কে ফিরে পাওয়ার আকুতি মিনতি জানায়।

জনাব অহিদুজ্জামান বিষয়টি পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মইনুল হাসান পিপিএম’ কে অবহিত করেন এবং সবিস্তার খুলে বলেন। পুলিশ সুপার সম্পূর্ণ বিষয়টি মনোযোগের সহিত শোনেন এবং তৎক্ষনিক পটুয়াখালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান পূর্বক মহিদুলের মা’কে খুজে বের করার দায়িত্ব দেন।

পুলিশ সুপার মহোদয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনা এবং জনাব অহিদুজ্জামানের সহায়তায় বরগুনার আমতলী থানা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণের সাথে আলাপ আলোচনা করে মাহিদুলের মা, বোন, নানী, মামা এবং খালা কে খুজে পেতে সক্ষম হন এক পর্যায় থানাপুলিশ ।

অবশেষে গতকাল ৩ জুলাই সন্ধ্যায় আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মাহিদুলের মা, খালা, বোন ও মামাকে পটুয়াখালী থানায় ডেকে আনলে তারা মাহিদুলকে দেখে অঝোরে কাঁদতে থাকে স্বজনরা।

এ যেন ঈদের চাঁদ সত্যিকারে হাতে পাওয়ার মতো। তৎক্ষণাৎ পটুয়াখালী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোঃ মাহফুজুর রহমান কে সদর থানায় পাঠানো হয়। তার উপস্থিতিতে প্রতিবন্ধী ও নারী শিশু হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে তাদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে দীর্ঘ ০৮ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়া হয়।