মেঘনায় এখনো চলছে ইলিশের প্রজনন!

মেঘনায় এখনো চলছে ইলিশের প্রজনন!

মনিরুজ্জামান,ঃ

ভোলার বৃহতম অভয়াশ্রম মেঘনায় এখনো চলছে ইলিশের প্রজনন।যা অনেকটা ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা।ফলে চলতি অর্থ বছরে বিগত বছরগুলোর তুলনায় রুপালি ইলিশ বেশি উৎপাদিত হবে।এমন আশাবাদ ব্যক্ত করলেন মেঘনার জেলে,দাদানদার,মৎস্য সমিতির নেতৃবৃন্দ সহ স্থানীয় মৎস্য অধিদপ্তর।
বোরহানউদ্দিন উপজেলাধীন মেঘনা নদীর বৃহৎ মাছঘাট” মির্জাকালু মাছঘাট”। মাছের প্রাচুর্য ও বড় ইলিশের জন্য ভোলাজুড়ে এ মাছঘাটের রয়েছে বেশ খ্যাতি ।পদ্মার ইলিশের মতো চাহিদা রয়েছে এখানকার ইলিশের।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ভোলায় ১,৭১,০০০ মে. টন আর বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ১৪,৩৬৭ মে. টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে উৎপাদিত হয় ভোলায় ১,৭৭,৮০৪ মে. টন ও বোরহানউদ্দিনে ১৬৯২১ মে. টন। আর এ মাছঘাটের সাথে মেঘনা নদীতে মাছ ধরা ও মাছ বিক্রিতে সংযুক্ত ছোট বড় প্রায় ৪০০ টি মাছ ধরার নৌকা।
২ আগস্ট সদ্য যোগদানকৃত বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সাইফুর রহমান ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এফ এম নাজমুস সালেহীন ওই মাছ ঘাট পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা জেলেদের আরোহিত বেশ কয়েকটি নৌকায় মাছ পান, যা সদ্য ডিম ছেড়েছে। কিছু মাছের পেট ভর্তি ডিম। স্বাভাবিক আকৃতির মাছও বিদ্যমান।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, স্থানীয় জেলে মিন্টু ও সাফিজলের সাথে কথা বলে জানা যায় , ইউএনও ও মৎস্য অফিসার সকাল ১১ টার দিকে মাছ ঘাট পরিদর্শন করেন। এ সময় সদ্য নদী থেকে মাছ ধরে ফেরা দুইটি নৌকার মাছ পর্যবেক্ষণ করেন। ২২ টি মাছের মধ্যে ৫ টি এমন মাছ পান যা গত ২/১ দিনের মধ্যে ডিম ছেড়েছে। ৫ টি মাছের পেট ভর্তি ডিম। বাকিগুলো সাধারণ আকৃতির। কোন জাটকা আকৃতির মাছ নেই। সব থেকে ছোট মাছটির দৈর্ঘ্যও ২৫ সেন্টিমিটারের কিছু বেশি।
এ অসময়ে মা ইলিশ ও ইলিশের ডিম ছাড়ার বিষয়ে মৎস্য কর্মকর্তা জানান, “ইলিশ প্রায় সারা বছরই কমবেশি ডিম ছাড়ে, তবে ব্যাপকভাবে ডিম ছাড়ে অক্টোবর ও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে। এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে ২/১ দিনের মধ্যে পূর্ণিমা আসন্ন থাকায় পরিপক্ক ইলিশের ডিম পাড়ার প্রবনতা থাকা স্বাভাবিক। তবে নদীতে এসময়ে ইলিশ একটু কম থাকে। সামনের অমাবশ্যা নাগাদ ইলিশের প্রাচুর্য নদীতে বাড়ার সম্ভাবনা আছে।” চলমান বছরে ভোলার মেঘনা নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ আহরণ করা হয়। বিশেষত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে প্রচুর ইলিশ আহরণ করা হয় যাদের মধ্যে এক কেজি বা তার উপরের ওজনের মাছের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।
মৎস্য ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর মাঝি,দাদনদার সোহাগ মীর,সফিক ব্যাপারী ও স্থানীয় জেলে কালাম ও কবির জানান, “সরকারের নদীতে অভিযানের ফলে আমরা পাইতাছি। এখন আগের চাইতে বড় ইলিশ জালে বেশি পড়ে।” উল্লেখ্য সরকারের গৃহীত মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম, জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রম, ইলিশ অভয়াশ্রম বাস্তবায়নের ফলে ইলিশের উৎপাদন ও আকার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। তবে মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন সময়ে সকল জেলের জন্য ভিজিএফ চাল সহায়তা ও প্রণোদনা হিসাবে অর্থ প্রদানের দাবি সংশ্লিষ্ট জেলে ও মৎস্যজীবীদের।