বেবি তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে বোরহানউদ্দিনের কৃষকদের

মনিরুজ্জামান, বোরহাউদ্দিন সংবাদদাতা :
কীটপতঙ্গের আক্রমণ না থাকা, স্বল্প সময়ে ভালো ফলন এবং প্রত্যাশিত বাজার মূল্য পাওয়ায় ভোলার বোরহানউদ্দিনের কৃষকদের মাঝে বেবি তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে। প্রায় বারোমাসি আবাদযোগ্য এ ফসল করোনাকালীন সময়ে কৃষকদের বাড়তি আয়ের উৎস হয়েছে।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের অথার্য়নে জন উন্নয়ন সংস্থার সার্বিক সহযোগীতায় উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের ৯ জন কৃষককে প্রশিক্ষন সহ সার, বীজ ও কীটনাশক প্রদান করেন সংস্থাটি। দেশিয় তরমুজ বাজারে না থাকায় এর চাহিদা মেটাতে অসময়ে নতুন জাতের এই তরমুজ চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছে তারা। বেবি তরমুজ সাধারনত মাচায় চাষ করা হয়। এটা বাহির থেকে কালো দেখালেও ভিতরটা লাল টকটকে ও মিষ্টি।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়, ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় খুশি চাষিরা।
জন্য উন্নয়ন সংস্থার সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ আনিচুর রহমান জানান, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্ল্যাকবেরি তরমুজের রোপন করা যায়। ৬০ দিনের মধ্যে এ তরমুজের ফলন আসে। যেখানে সাধারণ তরমুজের ফলন আসতে সময় লাগে ১১০ থেকে ১২০ দিন।
বেবি তরমুজ চাষি সাচড়া গ্রামের চাঁন মিয়া জানান, মাত্র ৩ শতাংশ জমিতে বেবি তরমুজ চাষ করেন তিনি। এ পর্যন্ত ৬ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রয় করা হয়েছে। ক্ষেতে যা রয়েছে তা ৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন। তার প্রতিবেশি চাষি শাহাজল হক ভাওয়াল জানান, এই তরমুজ বিক্রির জন্য বাজারে উঠাতে হয়নি। তরমুজটি নতুন জাতের হওয়ায় ক্রেতারা আমাদের ক্ষেত থেকে সরাসরি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা আরো বেশি লাভবান হচ্ছি।
রামকেশব গ্রামের চাষি আ: আলী জানান, এই তরমুজ খুবই একটি লাভ জনক। বছরের যে কোনো সময় চাষ করা যায় বিধায় এবং নতুন জাতের তরমুজ হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা বেশি। দাম ও অনেক ভালো। দূর থেকে অনেকেই নতুন জাতের এই তরমুজ দেখতে আসে।
কৃষাণী মোসা: ওহিদা বেগম জানান, অন্যান্যদের মতো প্রশিক্ষন নিয়ে আমিও বেবি তরমুজ চাষ করি। ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় আমি খুব খুশি।

চাষি রিয়াজ চৌধুরী, , নিরব, মো: আলী ও বিবি শাফিয়া সহ সকলে আগামীতে আরো বেশি জায়গায় বেবি তরমুজ চাষ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। তারা আরো জানান, আমরা প্রতি কেজি তরমুজ ৬০-৭০ টাকা দরে কিক্রি করছি।
ইউনিয়নের অনান্য কৃষকরা বেবি তরমুজ দেখতে এসে তারাও চাষাবাদের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
গ্রামীন জন উন্নয়ন সংস্থার দরুন বাজার শাখার সহকারী ভেলু চেইন ফ্যাসিলিটেটর ইকবাল আহম্মদ অভি জানান, ‘‘মুগডাল ও সুগন্ধি ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বাজারজাতকরণের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্প্রসারিত’’ প্রকল্পের মাধ্যমে বেবি তরমুজ চাষে বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নে ৭ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলা সহ মোট ৯ জন প্রান্তিক চাষির মাঝে মালচিং পেপার, বীজ, সার, কীটনাশক, জাল, রশি ও প্রত্যেক কৃষকের জন্য ১৫শত টাকা করে অনুদান ও প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়। তারা ৯ জন প্রায় ১ একর জমিতে এই তরমুজ চাষ করে। তিনি আরো জানান, বেবি তরমুজ বছরের যে কোনো সময় চাষ করা যায়। বীজ রোপন থেকে ৭৫ দিনের মধ্যে বাজারে বিক্রি করা যায়। এর প্রতিটির ওজন গড়ে ১ কেজি থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তরমুজটি সম্পূর্ন নতুন জাতের হওয়ায় প্রথম দিকে এই তরমুজ চাষে কেউ আগ্রহী ছিল না। এখন এর ভালো ফলন ও অধিক লাভ দেখে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন। বীজ রোপনের শুরু থেকে ফল আসা পর্যন্ত আমরা তাদের সার্বিক সহযোগীতা এবং প্রদর্শনী ক্ষেত গুলো পর্যবেক্ষন করেছি।
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ফিরোজ আলম বলেন, বেবী তরমুজ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত একটি নতুন জাত। ভোলার জলবায়ুগত দিক থেকে এটি যথেষ্ট সম্ভাবনাময় ও লাভজনক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওমর ফারুক এর সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।