“জীবিকার কাছে জীবন যখন পরাজিত “


——————————————————–
রাজিব। কলেজ পড়ুয়া ছাত্র। পুত্র কে নিয়ে কৃষক পিতার বর্ণিল স্বপ্ন! পড়ালেখায় একটু ভালো। এছাড়া নম্র- ভদ্র হওয়ায় প্রতিবেশীরা তাকে একটু ভিন্ন চোখে দেখতেন । ৫ ভাই আর বোনের মধ্যে রাজিব তৃতীয়। বাবা মায়ের স্বপ্ন। পড়ালেখা করে রাজিব বড় হবে। সংসারের হাল ধরবে। গুজবে দুঃখ-কষ্টের অধ্যায়।
এককোষী ভাইরাস করোনার তাণ্ডবে সারা দেশের ন্যায় বাংলাদেশ ও আক্রান্ত। কর্মময় জীবন স্থবির হয়ে পড়ছে। জীবন-জীবিকার হিসাবের অংকটা মেলানো যে বড়ই কঠিন। দীর্ঘ সময়ের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। দিন কাটছে না। অন্যদিকে অভাব নামক অতিথির আনাগোনা। পরিবারের দুঃখ কষ্ট রাজীবকে আহত করত সবসময়। চাপা স্বভাবের কারণে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটতো না। না পরিবারের কাছে।না বন্ধুমহলে । দারিদ্রতা নামক অতিথি যখন জগদ্দাল পাথরের মতো তার জীর্ণশীর্ণ কুঠিরে অবস্থান করত।ব্যাকুল হয়ে উঠত রাজিব।ছাত্র অবস্থায় বাবাকে ছায়া দেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে। সিদ্ধান্ত নেয় কিছু করার। কিন্তু বেরসিক সমাজ ব্যবস্থায় লজ্জা যে বড় বাধা।এলাকায় কাজ করলে বন্ধুরা দেখবে। এসব ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় ইট-পাথরের রাজধানীতে চলে যাবে। শ্রম বিক্রি করবে। জীবনের দামে জীবিকা কিনবে। যেই সিদ্ধান্ত, সেই কাজ।নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে শুরু হয় শ্রম বিক্রি। বেশ ভালোই চলছিল তার। হঠাৎ ঈশান কোণ থেকে আসা আয়লা-নামক ঘূর্ণিঝড় তার স্বপ্নকে লন্ডভন্ড করে দেয়। ২০ এপ্রিল প্রতিদিনের মতো কাজে যায় রাজিব।হাতে থাকা রড বিদ্যুতায়িত হয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে রাজীবকে। সহপাঠীরা দ্রুত উদ্ধার করে তাকে নিয়ে যায় নিকটবর্তী সোহরাওয়াদী হাসপাতাল। কয়েক ঘন্টা জীবনের সাথে যুদ্ধ করে পরাজিত হয় রাজিব।চুরমার হয়ে যায় নিম্নমধ্যবিত্ত নামক একটি পরিবারের সকল স্বপ্ন – সাধ। হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মুক্তি পান ২১ এপ্রিল। রওনা দেন বাবা-মায়ের কাছে । তবে লাশ হয়ে কফিনে।প্রিয় বাবা -মা কিংবা রাজীবের স্বপ্ন থেকে যায় অধরা। নিন্মমধ্যবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত আশরাফুল মাখলুকাত হওয়া যে আমাদের সমাজে বড় অন্যায় আলিমুল গায়েব কি তা জানতেন না?
পৃথিবীতে সবচেয়ে ভারবাহী বস্তু হলো বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ। হতভাগ্য বাবা ইউসুফ যে আজকে নিরুপায় হয়েএই অসম্ভবকে সম্ভব করতে হয়েছিল।হায় বিধাতা আর কত কাল চলবে এ খেলা ! যে সময়ে রাষ্ট্রযন্ত্র তোমার হাতে বইখাতা তুলে দেওয়ার কথা ছিল, সেসময় জীবন-জীবিকার তাগিদে তুমি তুলে নিলে ইট পাথর আর রড।তুমিই গড়তে চেয়েছিলে তোমার ভবিষ্যৎ। দাঁড়াতে চেয়েছিলাম নিজের পায়ে। রহস্যময় বিধাতা তোমার সে স্বপ্নকে
বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। এই দুর্ভেদ্য রহস্য আমাদেরও উন্মোচন করা সম্ভব না । তোমার এই শ্রমকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। জীবন দিয়ে জীবিকা কিনলে তুমি। পরপারে ভালো থেকো। পারলে রাজিব আমাদেরকে ক্ষমা করো তুমি।
লেখকঃ এম,মনিরুজ্জামান
সম্পাদক ও প্রকাশক
বিনিউজ২৪. নেট