সাগরে শুরু হল মাছ ধরা বন্ধ মৌসুম

বিশেষ প্রতিবেদকঃ

বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় আজ ২০ মে থেকে শুরু হয়েছে সকল ধরণের মাছ ধরা নিষিদ্ধ মৌসুম। এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, সামুদ্রিক মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয় বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সকল ধরণের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকরণ। তবে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র বাণিজ্যিক মৎস্য ট্রলারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল এ নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু আরভি মীন সন্ধানী গবেষণা জাহাজসহ আরো বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে, সাগরে মাছের মজুদ ব্যপকহারে হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে মৎস্য আহরণ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, সাগরের আহরিত মাছের প্রায় ৮৪ শতাংশই আহরিত হয় গতানুগতিক মাছ ধরার ইঞ্জিন বা ইঞ্জিনবিহীন নৌকা দিয়ে। তাই ২০১৯ সাল থেকে সকল ধরণের মৎস্য নৌযান দিয়েই যে কোন প্রজাতির মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

২০১৯ সালে এ ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে উপকূলীয় জেলেরা ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু করলে সেই বছর সরকার উপকূলীয় সকল জেলের জন্য বিশেষ ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান ২০২১ সালেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উপকূলীয় মোট ২,৯৮,৫৯৫ জন জেলের বিপরীতে প্রথমধাপে জনপ্রতি ৫৬ কেজি হারে মোট ১৬,৭২১ কেজি ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

উপকূলীয় সাগরের জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রায় সবাই গত বছর উক্ত চাল পেয়েছেন, কিন্তু যেহেতু তারা সাগরে মাছ ধরে অভ্যস্ত তাই তাদের প্রধান জীবিকার সময় শুধুমাত্র দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব নয়। এজন্য তারা চালের পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থানের বিভিন্ন কর্মসূচি চালুকরণ ও উক্ত সময়ে সাগরের জেলেদের জন্য বিশেষ ভাতা প্রদানের দাবি জানান। গংগাপুরের সাগরের জেলে ইউসুপ জানান, “খালি চাইল দিয়ে কি আর প্যাট ভরে, ত্যাল-নুন কিননের পয়সাও তো লাগব”। আরেকজন সাগরের জেলে কবির জানান, “ধরেন স্যার এইডা হইল মাছের প্রধান মৌসুম, এইসময় মাছ না ধরলে চালান তোলা যায়না। মহাজনের এত ট্যাকার ট্রলার, আমাগো হেই কী দিব?”

মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক এ. এফ. এম. নাজমুস সালেহীন জানান যে, “নতুনভাবে যুগোপযোগী করে প্রণিত সামু্দ্রিক মৎস্য আইন ২০২০ অনুসারে এবারের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের উপকূলীয় জেলা ও উপজেলাগুলোতে ইতিমধ্যে জেলেদেরকে নিয়ে সচেতনতা সভা, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। সহযোগী সকল সংস্থাকে নিয়ে কর্মপরিকল্পনা ও প্রচার অভিযান শেষ করা হয়েছে। জেলেদের সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও নদীতে তাদের বৈধ উপায়ে মাছ ধরতে কোন বাধা নেই”। বরিশাল বিভাগের নদীগুলো কোথায় শেষ হয়ে সাগর শুরু হয়েছে এর কোন দৃশ্যমান সীমানা আছে কিনা যা দেখে জেলেরা চিনতে পারবে-এমন প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা জানান যে, “এই আইনের বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। বিধিমালাতে হয়তো বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকবে। এই সমস্যার কথা আমরা বিভিন্নস্থানে সচেতনতা সভা করার সময় জেলেদের কাছ থেকে শুনেছি। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের কাছে আমরা এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছি। আশা করি অচিরেই এর সমাধান হবে”।

মৎস্য অধিদপ্তরের ২০১৮-২০১৯ সালের মৎস্য উৎপাদনের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে, দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের শতকরা ১৫ ভাগ আসে সামুদ্রিক মৎস্য থেকে। বর্ধিত জনসংখ্যার আমিষ ও পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সাগরের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।