বোরহানউদ্দিনে জমি বিরোধ নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় কলেজ ছাত্রের চোখ নষ্টের উপক্রম

বোরহানউদ্দিন প্রতিনিধি ঃ
ভোলার বোরহানউদ্দিনে জমিজমার বিরোধে সৈকত চন্দ্র দে নামক এক যুবকে পিটিয়ে চোখ নষ্ট করার অভিযোগ উঠছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে । এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন আহতের পিতা সমির চাঁদ দে। মামলার প্রধান আসামি জুয়েল বর্তমানে জেল হাজতে। প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নে মামলার বাদী সমীর চাঁদ দে গং-এর সাথে প্রতিপক্ষ অন্য ওয়ারিশদের যৌথ সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছিলো। মামলার মূল আসামি ও তার পিতা দুলাল চন্দ্র দে গং-এর জোর-জবরদখল ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ইতিপূর্বে খবরের শিরোনাম হয়েছে। বিরোধীয় সম্পত্তি নিয়ে মামলাও চলমান রয়েছে।

আহতের বাবা সমীর চাঁদ দে জানান, তাদের পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত প্রায় ৪ একর সম্পত্তি আসামিরা দখল করে নিয়েছে। আসামিদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কাছে বাদীরা অসহায়। , সর্বশেষ গত ২৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখ সমির চাঁদ দে তাদের পৈত্রিক ও ক্রয়কৃত ভোগদখলীয় জমিতে ট্রাক দিয়ে বালু ভরাট করার সময় সন্ত্রাসী জুয়েল চন্দ্র দে (৩৭) ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা লোহার রড, স্টিলের পাইপ, লাঠিসোটা ও বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের উপর অতর্কিত হামলা করে।

এ সময় প্রধান আসামি জুয়েল, সৈকত চন্দ্র দে কে হত্যার উদ্দেশ্যে লোহার রড দিয়ে মাথায় বারি মারলে সৈকত আত্মরক্ষার জন্য সরে যাওয়ার সময় বাম চোখে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়। অন্যান্যদেরকেও লাঠিসোটা দিয়ে আসামিরা যখম করে। জুয়েল গংরা দলবল নিয়ে বাদী পক্ষের নারীদের ব্যবহৃত বিভিন্ন অলঙ্কার ও সৈকত চন্দ্র দের স্মার্ট মোবাইল ফোন এবং বাদীর পকেট থেকে বালু ভরাটের বিল নগদ ৫০ হাজার টাকাসহ ১ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকার মালামাল ছিনতাই করে।

আহত সৈকত চন্দ্র দে কে তাৎক্ষণিক বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ ভর্তি করলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে বলেন। আহত সৈকত কে প্রথমে বরিশাল শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতাল ও পরে ঢাকা শেরে বাংলা নগরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনিস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এমতাবস্থায় সৈকত শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সৈকত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকার একটি কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্টে ১ম শ্রেণিতে মাস্টার্স পাস করে এমবিএ পড়ছিলো। এ অবস্থায় একজন মেধাবী ছাত্রের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

দেশের চলমান করোনা পরিস্থিতির অস্থিতিশীলতার মধ্যে নিজ পুত্রর চিকিৎসা করাতে নানান সমস্যা ও ব্যস্ততার কারণে বিগত ১১ মে ২০২১ তারিখ সমীর চাঁদ দে বাদী হয়ে দুলাল চন্দ্র দে’র পুত্র জুয়েল চন্দ্র দে কে প্রধান আসামি করে সর্বমোট ১০ আসামির বিরুদ্ধে বোরহান উদ্দিন থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং জিআর ৮৪/২১। অন্যান্য আসামিরা হলো- সৌরভ চন্দ্র দে, প্রিয়লাল চন্দ্র দে, কাজল চন্দ্র দে, দুলাল চন্দ্র দে, আশিষ কুমার দে, গীতা রাণী দে, মনিকা রাণী দে, মঞ্জু রাণী দে ও হ্যাপী রাণী দে।

উক্ত মামলায় জামিন নিতে গেলে ভোলার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিগত ২৭ মে ২০২১ তারিখ প্রধান আসামি জুয়েলের জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ প্রদান করেন। অপরদিকে প্রতিপক্ষ কাজল চন্দ্র দে বাদী হয়ে সমিরের মামলার দশ দিন পরে ২০ মে ২০২১ তারিখে আরেকটি বানোয়াট মামলা দায়ের করে বলে সমীর চাঁদ দে অভিযোগ করেন। তবে সে মামলায় ভোলার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিগত ২৬ মে ২০২১ তারিখ সমীর চাঁদ দে গং-এর সকল আসামির জামিন মঞ্জুর করেন।