বোরহানউদ্দিনে আখ চাষ: ফলন-দামে চাষির মুখে হাঁসি

মনিরুজ্জামান,
ভোলার বোরহানউদ্দিনে এবার আখের ফলন খুব ভালো হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকায় ,ভালো দামও পাচ্ছেন চাষিরা। যার কারণে তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকা,ভালো জাত নির্বাচন,রোগব্যাধি কম থাকা,সময় মতো কৃষি উপকরণ এবং পরামর্শ পাওয়ায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর ফলন বেশী হয়েছে এমন দাবী কৃষি অফিস ও কৃষকদের। কৃষকরা জানান, এবার একর প্রতি জমির আখ বিক্রয় করে লাভ করেন ১লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। ভোলা-বরিশাল ব্রিজ হলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে দাম আরো বেশি হতো।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়,চলতি বছর এ উপজেলায় ১২৫ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ২৫ মেঃটন বিভিন্ন জাতের আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্জিত হয়েছে ৫হাজার ৮শ ৭৫ মে:টন। অমৃত,রংবিলাশ,ঈশ্বরদি-২০৬ জাতের আখের গড়ে হেক্টর প্রতি উৎপাদন ৪০-৪৫টন । কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বেলে ও বেলে-দোআঁশ মাটি আখ চাষের জন্য উপযুক্ত। সাত –আট মাসেই আখের ফলন পাওয়া যায়। আখ চাষ করে ধানের চেয়ে দ্বিগুণ লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি হয়েছে।
বরিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলার বড়মানিকা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বোরহানউদ্দিন আলিয়া মাদরাসা সংলগ্ন কয়েকটি আখ ক্ষেত পরিদর্শেন গিয়ে কথা হয় কয়েকজন আখ চাষির সাথে।ওই এলাকার ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে ইছহাক মিয়া জানায়,চলতি বছর তিনি ৪একর জমিতে রং বিলাশ ও ২০৮ প্রজাতির আখ চাষ করেন। এতে একর প্রতি খরচ হয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।ওই জমির আখ তিনি ক্ষেতেই বিক্রয় করেন ৩ লাখ ১২ হাজার ৫শ টাকায় । এ হিসেবে তিনি ৪ একর জমিতে আখ চাষ করে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভ করছেন বলে জানান। তিনি আরও জানান, ধানের চেয়ে আখে খরচ ও পরিশ্রম কম। আয় বেশী। আখ কোন চাষীকে ঠকায় না । আখ চাষী রেশদ আলী,আ:মালেক,খোরশেদ আলম,সহিদুল ইসলাম জানায়,আখের রোগ বালাই কম।অন্য ফসলের মতো এতো যত্ন করতে হয় না।আখ বিক্রয় করে অর্ধেক অর্ধেক লাভবান হওয়া যায়।
আখ চাষী রেশাদ আলী জানান,উন্নত জাত পরিচিতি,চাষের কলা-কৌশল,পোকা-মাকড় ও রোগ ধমন সম্পর্কে হাতে কলমে জ্ঞান অর্জণের জন্য তিনি ঈশ্বরদি সুগার ক্রপ গবেষনা ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।যা তার অনেক উপকারে আসছে। তারা জানান,আখ ৮ মাসের ফসল।আলু ৯০দিনের।তাই আখের সাথে আলু চাষ করেই খরচ উঠানো যায়। ।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান রনি,বিশ্বজিৎ দে জানান, “আখের সাথে আলু চাষ সুখে থাকি বার মাস” এ শ্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে কৃষকরা আখ চাষে ঝূকছেন। তাছাড়া কৃষকরা আখ চাষের সাথে সাথি ফসল, যেমন আলু,গাঁজর,বাধাকপি,ফুলকপি, ও শিম চাষ করে লাভবান হতে পারেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আখ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সাথি ফসল থেকে আংশিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়। এ জন্য কৃষকরা আখ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএইচএম শামীম জানান,আখ চাষ খুব লাভজনক । লাল পঁচা রোগ ছাড়া তেমন জটিল রোগ নেই এ ফসলে।বর্তমানে আমরা এ উপজেলায় চিবিয়ে খাওয়ার উপেযোগী জাতের আখ চাষের জন্য চাষীদের উদ্বুদ্ধ করছি।