করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করলেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

করোনা ভাইরাসের কার্যকরী ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দাবি করেছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পিটসবুর্গের একদল বিজ্ঞানী এ দাবি করেন। তারা জানায়, এই ভ্যাকসিনটি ইঁদুরের শরীরে সফল পরীক্ষা চালানো হয়েছে। ভ্যাকসিনের প্রয়োগের পর ইঁদুরের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।

ভ্যাকসিন আবিষ্কারের এই দাবি নিয়ে ই-বায়োমেডিসিন জার্নালে বৃহস্পতিবার বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব পিটসবুর্গের স্কুল অব মেডিসিনের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আন্দ্রিয়া গ্যাম্বোত্তো বলেন, আমরা খুব শিগগিরই এই ভ্যাকসিনটি রোগীর শরীরে প্রয়োগ করতে পারবো।

ভ্যাকসিন তৈরির এই গবেষণার কো-অথর ইউনিভার্সিটি অব পিটসবুর্গের চর্মরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক লুইস ফ্যালো বলেন, আমরা এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে পৌঁছেছি। আমরা এটি প্রয়োগের জন্য এক মাস অথবা দুই মাস ভাবতে চাই। আমরা মাত্রই প্রক্রিয়াটি শুরু করেছি।

বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসের কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরির এই ঘোষণা যখন মার্কিন বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন, ততক্ষণে বিশ্বজুড়ে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখের বেশি। তবে নতুন কোনও ভ্যাকসিন তৈরি হলে তা মানবদেহে প্রয়োগের জন্য মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ প্রশাসনের অনুমোদন পেতে এক থেকে দুই বছরের বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়।

এর আগে, গত ১৬ মার্চ সিয়াটলের চারজন স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে প্রথমবারের মতো একটি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। সিয়াটলের বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করলেও নতুন এবং দ্রুতগতিতে অপর একটি ভ্যাকসিন তৈরি করলেন ইউনিভার্সিটি অব পিটসবুর্গের বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীরা ল্যাবে ভাইরাল প্রোটিন বব্যহার করে ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছেন; যা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে। ইঁদুরের শরীরে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় দেখা গেছে, ভ্যাকসিনটি ইঁদুরের শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে।

পিটসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণা নিবন্ধটি প্রথমবারের মতো দেখেছেন ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের স্কুল অব মেডিসিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ডেভিড ও কনোর। তিনি বলেন, এই মুহূর্তের অনেক অনেক ভ্যাকসিন পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে এমনটি একটি ভ্যাকসিন তৈরির এই প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেয়া উচিত। তবে কার্যকরী ভ্যাকসিন তৈরির পথে এটি একটি পদক্ষেপ মাত্র। সামনে আরও অনেকদূর যেতে হবে। তবে এই গবেষণায় নতুন কিছু প্রথম পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা এই ভ্যাকসিনের নাম দিয়েছেন ‘পিটকোভ্যাক’; যা দিয়ে পিটসবার্গ করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন বোঝানো হয়েছে। এই ভ্যাকসিনের দু’টি উপকারী দিকের কথা তুলে ধরেছেন তারা। ভ্যাকসিনটি পরিবহন অথবা সংরক্ষণের জন্য হিমায়িত করতে হবে না। ঘরের ভেতরে যেকোনো তাপমাত্রার মধ্যে রাখা যাবে ভ্যাকসিনটি। যে কারণে অনেক দরিদ্র দেশে ভ্যাকসিনটি সস্তায় সরবরাহ করার আশা দেখছেন এই বিজ্ঞানীরা।

এই ভ্যাকসিনের একটি ডোজের মূল্য কত হতে পারে সেব্যাপারে এখনই পরিষ্কার করে কিছু বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে গবেষকরা। তবে একবারের এক ডোজের জন্য কমপক্ষে ১০ ডলার গুণতে হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা। নতুন এই ভ্যাকসিনের অনুমোদনের জন্য মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অনুমতি মিললে বাজারে আসতে পারে এই ভ্যাকসিন।

এই বিজ্ঞানীরা ২০০৩ সালে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (সার্স) ভাইরাসের একটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি আলোর মুখ দেখেনি। তাদের ভ্যাকসিনটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে থাকাকালীন সার্সের মহামারি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ২০১২সালে মধ্যপ্রাচ্যে করোনাভাইরাসের অপর একটি গোত্র মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোমের (মার্স) প্রকোপ শুরু হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে উটের শরীর থেকে মানবদেহে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত আড়াই হাজার মানুষের মত্যু হয়। মার্সের ভ্যাকসিনও পিটসবুর্গের এই বিজ্ঞানীরাই তৈরি করেছিলেন।
সূত্র : ইউএসএ ট্যুডে, নিউইয়র্ক পোস্ট।