২৮ বছরেও মেলেনি রাস্তা, পানি ডিঙ্গিয়ে আসা যাওয়া

বোরহানউদ্দিন (ভোলা) সংবাদদাতা ঃ

২৮বছর ঘুরছি চেয়ারম্যান-মেম্বারের পিছনে। একটি রাস্তার জন্য।কেউ পুরণ করেনি ওয়াদা।আশায় আশায় পাড় করছি এতগুলো বছর।বর্ষা মৌসুমে কখনো হাটু পানি। আবার কখনো তার চেয়ে বেশি ।অনেকটা ঘরবন্ধি হয়ে থাকি।পানিতে ভিজেই বিলের মধ্যে দিয়ে হাট-বাজার করি। এ সময় ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। কোনো মেহমানও আসে না আমাদের বাড়িতে। এতগুলো বছরে ও উন্নয়নের জোয়ার আমাদের কাছে আসলো না। এখন ও চেরাগ(কুপি) আলোতে আমরা দিন কাটাই।এমন কথাই বললেন ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের বাথান বাড়ির গ্রামের শরীফ আবু তাহের সহ ৬ পরিবারের অনেকে।

সাচড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাথান বাড়ির গ্রামের দর্জির ভিটায় বসবাসকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,আজ থেকে ২৮ বছর পূ্র্বে উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের বাথান বাথান বাড়ির গ্রামের বিলের মধ্যে দর্জির ভিটায় ৬টি পরিবার বসবাস শুরু করেন। বর্তমানে ওই বাড়িতে বসবাসকারি লোকের সংখ্যা ৫০ জন।মূল সড়ক থেকে আনুমানিক ৬ শত ফুট দুরত্বে তাদের বসবাস।মূল সড়ক থেকে ওই বাড়ির দুরত্ব আনুমানিক ৬শ ফুট।অপেক্ষাকৃত নিচু জমি হওয়ায় বর্ষার মৌসুমে হাটু সমান কিংবা তার উপরে পানি থাকে।যার কারণে ওই পানির মধ্যে দিয়েই তাদের যাতায়াত।অসুস্থ্য রোগি হলে সমস্যার অন্ত নেই।ছেলে মেয়েরা বিদ্যালয়ে ঠিকমতো যেতে পারে না।দিন শেষে ভিজেই ঘরে ফিরতে হয়।বছর আগে বিদ্যুৎ এর লাইন নিলেও সংযোগ পায়নি এখনও।

তারা বলেন সরকারি খাস (হালট) জমি থাকা সত্যে বিএনপি আমলে চেয়ারম্যান, মেম্বারদের কাছে গেলে আশ্বাস ছাড়া মেলেনি কিছুই ৷ বাড়ী ফেরার রাস্তা না থাকায় ২৮ বছর যাবত ঘুড়েছেন অনেকের দুয়ারে ৷ এমনটি দাবি দর্জি বাড়ীতে বসবাস করা লোকদের ৷
ওই বাড়ীর বাসিন্দা আঃ মালেক এর ছেলে শহীদুল ইসলাম শরীফ (৪০) বলেন, মূল সড়ক থেকে শুরু করে আমাদের বাড়ীর পাশ ঘেঁষে ১১ ফুট প্রস্থের একটা (হালট) ছিল।ওই সময় সেই খাস জমির উপর দিয়ে আমাদের বাড়ী পর্যন্ত একটা চিকন রাস্তা ছিল ৷ যা দিয়ে আমরা কোনো রকম আসা-যাওয়া করতাম ৷ পরবর্তীতে পাশের জমির মালিকরা জমির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ঠিক রাখতে আইল কেঁটে ফেলে যার ফলে তা সম্পূর্ন বিলুপ্ত হয়ে যায় ৷ তার ভাই আবু তাহের (৫০) বলেন, বর্ষার দিনে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে নৌকা এনে বা কলা গাছ দিয়ে বেলা তৈরি করে মূল রাস্তায় নেওয়া হয়৷ আমাদের এই দূর্ভোগ দেখার কেউ নেই ৷ তামিম শরীফ (২৬) জানান, আমাদের সন্তানরা ঠিক মতো স্কুলে যেতে পারে না ৷ তাই তারা পড়াশোনায় অনেক পিছিয়ে ৷ বর্ষার মৌসুমে আমরা অনেকটা গৃহবন্ধীর মতো দিন কাটাই ৷ গরীব মাঝি এরব দাখিল মাদ্রাসার ৭ম শ্রেনীতে পড়ুয়া আমির হোসেনের মেয়ে বলেন, আমাদের বাড়ীতে আসার কোনো রাস্তা না থাকায়
বর্ষাকালে বিলের মধ্যের কাদা মাটি ও পানি দিয়েই স্কুল, মাদ্রাসায় আসা যাওয়া করতে হয় আমাদের ৷ এর ফলে অনেক সময় ক্লাশ মিস করি ৷ এই দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না আমাদের ৷ ১১৯ নং দেউলা শিবপুর সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্র, আবু তাহেরের ছেলে এনামুল, শহাদুলের ছেলে শামিম এবং আমির হোসেনের ছেলে শাকিব জানায়, আমরা তিন জন একই স্কুলের ৫ম শ্রেণীতে পড়ি ৷ রাস্তা না থাকায় ছোট বেলা থেকে আমরা ঠিক মতো স্কুলে যেতে পারিনা। এ ব্যাপারে, ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য, জাহিদ হোসেন জামাল বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে আমরা বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা করেছি ৷ সররারি বরাদ্ধ না থাকায় করতে পারিনি ।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহিবুল্যাহ মৃধা বলেন,বিষয়টি তার জানা নেই।তবে এ রকম সমস্যা হলে রাস্তা করে দেওয়া যাবে।

বোরহানউদ্দিন উপজেলার এলজিইডি এর প্রকৌশলী শ্যামল কুমার গাইন জানান, ভূক্তোভোগীরা আমাদের কাছে আবেদন করলে ওই স্থানে গিয়ে আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো ৷ এবং সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহন করবো ৷