ভোলায় সরকারি ঔষধ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন

মনিরুজ্জামান ঃ
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স তৃপ্তি রায়ের সরকারি ঔষধ কেলেঙ্কারির ঘটনা তদন্তে অবশেষে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভোলার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ ওয়াজেদ আলী, ভোলা সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মনিরুজ্জামান কে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত বোর্ড গঠন করেন। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন,ভোলা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফারজানা খান(জুটি), একই অফিসের জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সোলায়মান। যারা আগামী ৩০ আগষ্ট ওই কর্মকর্তার নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন।বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

উল্লেখ্য, তৃপ্তি রায় দীর্ঘ দিন ধরে বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত আছেন। উপজেলার কুঞ্জের হাট এলাকায় তার শ্বশুর বাড়ি। স্থানীয় হবার সুবাধে কিছুটা প্রভাবও খাটান তিনি। এ সব কারণে সরকারি ওই প্রতিষ্ঠানটির সকলের সাথে তার সুসর্ম্পক তৈরি হয়। এই সুবাদে তিনি বিভিন্ন সময় হাসপাতাল থেকে অবৈধভাবে ওষুধ বাড়ি নিয়ে যেতেন। ওয়ার্ডে দায়িত্বপালন কালে রোগিদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।রোববার হাসপাতালের বহির্বিভাগের ঔষধ সরবরাহ কেন্দ্র থেকে ৪৮ পাতা ওষুধ নিয়ে তিনি বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয়রা তাকে ধরে ফেলে। পরে তাকে এত ওষুধ কোথায় ও কেন নিয়ে যাচ্ছে প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর না দিয়ে দ্রুত আবার হাসপাতালে চলে যান। পরে স্থানীয়রা পিছু পিছু হাসপাতালের ওই কক্ষে ছুটে যান। এ সময় স্থানীয়রা তার হাতে থাকা বক্স ও ইউনিফর্মের পকেট থেকে বিভিন্ন ধরনের ৪৮ পাতা ওষুধ বের করে।পুরো বিষয়টি স্থানীয় সংবাদকর্মীগন ক্যামেরা বন্ধি করেন।পরে যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।শুরু হয় তোলপাড়।

তবে ভিডিও চিত্রে দেখা যায়,হাসপাতাল থেকে ঔষধ নিয়ে তৃপ্তি রায় বের হওয়ার সময় কালো বোরকা পরিহিত একজন মহিলা তার সাথে ছিলেন। যার হাতে একটি ব্যাগ ছিল।সংবাদকর্মী ভিডিও করার বিষয়টি টের পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান ওই বোরকা পরিহিত ভদ্র মহিলা।ওই সংবাদ কর্মীর ধারণা, পলায়নকারী মহিলার ব্যাগেও সরকারি ঔষধ থাকতে পারে।
হাসপাতালে ভর্তি একাধিক রোগীর সাথে কথা বললে তারা জানান,সব রকমের ঔষধ বাহির থেকে কিনতে হয়।ছোট মানিকা গ্রামের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আসা রোগী আমির হোসেন জানান,রবিবার তারা হাসপাতালে ভর্তি হন।স্যালাইন জিংক সহ সব ঔষধ তাদেরকে বাইরের থেকে কিনতে হয়েছে।অথচ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও স্টোরকিপার আব্দুল মান্নান জানান,হাসপাতালে ডায়রিয়ার স্যালাইন ( ৫০০ এমএল ৩০ টি)ও জিংক ঔষধ আছে।তবে বাইরে থেকে কেন কিনতে বলেছেন এর সদুত্তর দিতে পারেনি কর্তব্যরত নার্স মর্জিনা বেগম।একই রকম অভিযোগ আন্তঃবিভাগে ভর্তি সাদেজা ইয়াসমিনসহ অনেকের। জনমনে প্রশ্ন, যেহেতু আন্তঃবিভাগে ঔষধের বরাদ্ধ থাকা সত্বেও ভর্তিকৃত রোগীদের প্রায় সকল ঔষধ রোগিদের বাইরে থেকে কিনতে হয়।তাহলে স্টোর থেকে ওই বিভাগের বরাদ্ধকৃত ঔষধগুলো যায় কোথায়? বিষয়টি তদন্তের জন্য সচেতন মহল উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আহবান জানান। তবে এ সময় আন্তঃবিভাগে বরাদ্দকৃত ঔষধের রেজিস্ট্রার দেখতে চাইলে দায়িত্বরতরা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে হাসপাতালের স্টোরকিপার আব্দুল মান্নান জানান, সর্বশেষ বরাদ্দে ২১ আইটেমের ঔষধ সরবরাহ করা হয়েছিল।যার এরিথ্রোমাইসিন সিরাপ ১ হাজার বোতল,ট্যাবলেট স্রেফাডিন ৫০০ mg ২৮৮০০ পিচ,সিপ্রো iv ১০০০ বোতল। বরাদ্দ অনুসারে বলা যায়, সরকার তৃনমুল জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য বিশাল অংকের রাজস্ব ব্যয় করে এসব ঔষধ সরবরাহ করেন।অথচ রক্ষকগন( তৃপ্ত) ভক্ষকের ভূমিকা নেওয়ায় সরকারের মহৎ উদ্যোগগুলো আজ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে!