ঘূর্ণিঝড়” ইয়াস’র” প্রভাবে মেঘনার উপকূলীয় এলাকার প্রায় ১৭ হাজার মানুষের জীবন জোঁয়ার-ভাটার দোলাচলে।

ঘূর্ণিঝড়” ইয়াস’র” প্রভাবে মেঘনার উপকূলীয় এলাকার প্রায় ১৭ হাজার মানুষের জীবন জোঁয়ার-ভাটার দোলাচলে।

মনিরুজ্জামান,
ঘূর্ণিঝড় “ইয়াস “এর প্রভাবে ঝোড়ো বাতাস,থেমে থেমে বৃষ্টি আর পূর্ণিমা ও চন্দ্রগ্রহণের তিথি সামনে রেখে প্রমত্তা মেঘনায় অস্বাভাবিক জোঁয়ার বইছে।উত্তাল মেঘনার তীব্র স্রোত আছড়ে পড়ছে শহর রক্ষা বাঁধে। যার কারণে ভোলার বোরহানউদ্দিনের বড় মানিকা,পক্ষিয়া,হাসাননগর,টবগী এই চারটি ইউনিয়নের শহর রক্ষা বাঁধের বাইরে বসবাসকারী প্রায় ১৭ হাজার মানুষের জীবন বর্তমানে জোঁয়ার-ভাটার দোলাচলে। আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে ওই ইউনিয়নের বসবাসকারীদের। বিগত বছরগুলোর তুলনায় কোনো কারণে যদি জোঁয়ারের মাত্রা বৃদ্ধি পায় তবে রক্ষা বাঁধে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন শঙ্কা স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের।এছাড়া হাকিমুদ্দিন বাজার পানি প্লাবিত হওয়ায় ২ শত ব্যবসায়ীর বেচাকেনা বন্ধ। কষ্টে দিন কাটাচ্ছে তাদের এমন দাবি ব্যবসায়ী উজ্জ্বল হাওলাদারের।
মঙ্গলবার সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের বাইরে বিস্তীর্ণ এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত। ওই এলাকার বাড়িঘর গুলো পানিবন্দি। স্থানীয় লোকজন জানায়, ওই ইউনিয়নের ৫,৬,৮, ও ৯ নং ওয়ার্ডের মানুষের কষ্টের কথা । বেড়িবাধের বাইরে বসবাসকারী জাহাঙ্গীর, কামাল মাঝি, হাফিজুল মাঝি,রহিজল মাঝি, হান্নান, কুলসুম, ইয়াসমিন, শেখ ফরিদ জানান,জোয়ার আসলে তাদের ঘরগুলো পানি বন্দি হয়ে পড়ে। তখন ঘরের চৌকির উপর মাচা বানিয়ে তারা সেখানে অবস্থান করেন। এসময় তারা রান্নাবান্না করতে পারেন না।উপোস থাকতে হয় তাদের। ভাঁটা এলে স্বাভাবিক জীবন শুরু হয় ।
৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার রফিকুল ইসলাম জানান,ওই ওয়ার্ডের ১৫ শত লোক বেড়ির বাহিরে বসবাস করেন। এদের অবস্থা খুবই করুন। নুরে আলম, ইব্রাহিম, মানিক, আবুল কাশেম জানান, একদিকে করো না, অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞার দুই মাস নদীতে মাছ ধরতে পারিনি। এখন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ।শুরু হয়েছে ঘূর্ণিঝড। আমরা কি খেয়ে বাঁচব ?
শহররক্ষা বাঁধের জরুরি সংস্কার কাজ করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। স্থানীয়রা জানায়, স্বরাজগঞ্জ মাছঘাট হতে আলিমুদ্দিন বাজার পর্যন্ত ১০ চেইন সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। আলিমুদ্দিন বাজার থেকে সেন্টার বাজার পর্যন্ত ২০- ২৫ কাজ এখনো হয়নি। এই অংশ দিয়ে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা তাদের। রাজন খলিফা, নুরুদ্দিন, সালেহ আলম নিন্মমানের কাজের অভিযোগ তুলে বলেন, পানির চাপ বাড়লে বালুও মাটি ধুইয়ে সব নদীতে চলে যাবে। বড় মানিকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার জানান, তার ইউনিয়নের ৪ হাজার মানুষ ঝুঁকির মধ্যে আছে । পাউবোর কাজ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না, তবে লোকমুখে শুনছেন বলে জানান। পক্ষিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাগর হাওলাদার বলেন, তার ইউনিয়নের দুই হাজার লোক, টবগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল আহসান চৌধুরী বলেন,৩ হাজার লোক বেড়িবাঁধের বাইরে অবস্থান করছেন।হাসান নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মানিক হাওলাদার বলেন, তাঁর ১,২,৩,৪,৫, ও ৬ নং ওয়ার্ডের আংশিক সহ ৮ থেকে ১০ হাজার লোক বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাস করেন।যারা প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, ভোলা এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আসিকুর রহমান জানান, ৩০০ মিটার কাজ সমাপ্তির পথে। ১৩০ মিটার কাজের টেন্ডার হয়েছে যার কাজ চলমান। তিনি আরো বলেন, বিগত বছরগুলোর মতো যদি পানির লেভেল ঠিক থাকে তবে কোনো সমস্যা হবে না। কাজের মান খারাপ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে তিনি দাবি করেন।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় তাদের সর্বাত্বক প্রস্তুতি সম্পন্ন। যেকোনো পরিস্থিতি উপজেলা প্রশাসন মোকাবেলা করতে পারবে।