তেলের প্রভাব জলে,হতাশ জেলেরা

মনিরুজ্জামান,
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে মেঘনা- তেতঁলিয়া নদীর জেলেরা হতাশ।নদীতে ইলিশের আকাল,দাদনদার ও বিভিন্ন এনজিওর ঋনের চাপ,এর উপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে তেলের মূল্যবৃদ্ধি। সব মিলিয়ে যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা এর মতো। দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাদের জীবন। এমনদাবী মেঘনা – তেতুঁলিয়ার জেলে, দাদনদার, আড়তদার ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার মৎস্য অফিস সূত্র জানায়,এখানে নিবন্ধিত জেলের রয়েছে ১৯ হাজার ৮৪জন। তবে অনেকে জেলের দাবী অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে আরো কয়েক হাজার।

রবিবার (৭ আগস্ট) সকালে কথা হয় মেঘনা- তেতুঁলিয়া নদীর জেলে,দাদনদার ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের সাথে। তারা জানান, জ্বালানী তেলের এ দাম বৃদ্ধি তাদের জীবনমান কে আরো নিম্নমুখী করবে। তেতুলিয়া নদীর নয়নের খালের জেলে খোকন জানান, আগে তেল কিনতাম ৮০ থেকে ৮৬ টাকা করে।নতুন দামে ৭লিটার তেল ৭৯৮ টাকায় কিনে ৫ জন মাঝি মাল্লা নিয়ে নদীতে যাই। মাছ পাইছি ৬৮০ টাকার। মাঝি জাকির বলেন,সকালে ১১ শ টাকার মাছ বেচি। খরচ বাদ দিলে আমাদের আর থাকলো কি? আমরা কীভাবে বাঁচব? কীভাবে সংসার চালামু? ৮০ টাকার তেল একলাফে ১১৪টাকা।আমাগো কথা ভাবার কেউ নাই। আড়তদার জুয়েল বলেন,লাখ লাখ টাকা নদীতে। আমার ২০ জন মাঝি।রবিবার ঘাটে ১৫ হাজার টাকার মতো মাছ বিক্রি হচ্ছে। এদিকে নদীতে মাছ নাই।অন্যদিক তেলের দাম বাড়ছে।কী অবস্থা হবে আল্লাহ জানে।
সমরাজঘাটে অবস্থানরত তেঁতুলিয়ার জেলে সিরাজ বদ্দার বলেন,এখানে কিছু মাছ পাওয়া যায়।তেলের দাম বাড়ার কারণে বরফের দাম সহ খরচের পরিমান বাড়ছে।সব মিলিয়ে কুল কিনারা করতে পারি না।মেঘনার হাকিমুদ্দিন ঘাটের জেলে আব্দুল হক জাকির,নুরনবী,দুলাল,নোমান মাঝি,স্বরাজগঞ্জ ঘাটের আকতার,রিপন,মফিজ,মন্নান,মোসলেহউদ্দিন মাঝি বলেন,অনেকে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে চলেছি।তারা বলেন, ‘একে তো নদীতে তেমন মাছ নেই। তার উপর তেলের দাম দিনদিন এভাবে বাড়লে আমরা কীভাবে নদীতে যাবো? দিনদিন লোকসান গুনতে গুনতে কিছুদিন পর আমাদের ট্রলার বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’

মৎস্য ব্যবসায়ী কালাম বদ্দার,জাহাঙ্গীর মাঝি, জানান, মাজারি একটি বোট সাগরে যেতে ৫ ব্যারেল(১০০০ লিটার) আর বড় বোটে ১০ ব্যারেল তেল লাগে। নতুন করে তেলের দাম বাড়ায় তারা লোকসানের মুখে পড়েছেন। দিনদিন জেলেদের উপর ঋণের বোঝা ভারী হওয়ায় অনেক জেলে মাছ শিকার থেকে মুখ ফিরিয়ে বিকল্প পেশা খুঁজছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অনেকে।
বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির বোরহানউদ্দিন উপজেলার সভাপতি শাহে আলম ও ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবু সাঈদ মাঝি জানান,একদিকে নদীতে মাছ কম। অন্যদিকে একলাফে তেলের দাম ১১৪ টাকা হয়েছে।এটা জেলেদের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো।
এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলী আহম্মেদ আকন্দ জানান। বৃষ্টি হলে নদীতে মাছের পরিমান বাড়বে।মাছের দাম ও বাড়বে। বর্তমানে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জেলেরা কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়েছেন। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না।