আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছে না মেঘনা- তেতুঁলিয়ার উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ।

মনিরুজ্জামান
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় ভোলার বোরহানউদ্দিনের মেঘনা- তেতুঁলিয়ার উপকূলবর্তী ৫ ইউনিয়নের মানুষ আতঙ্কিত থাকলেও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছে না লক্ষাধিক মানুষ।বিশেষ করে মেঘনা বেড়িবাঁধের বাইরে ৪টি ইউনিয়নের ১১টি ওয়ার্ডে বসবাসকারী প্রায় ১৪ হাজার মানুষ বেশ ঝুঁকিতে রয়েছে। ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জানিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা উল্লেখ করে শনিবার সকাল থেকে অদ্যাবধি উপজেলার সর্বত্র সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারনা চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে  মেঘনার উপকূলবর্তী এলাকা জনসাধারণকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার অনুরোধ জানিয়ে বিভিন্ন স্পটে মাইকিং করেন ভোলা -২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল ।

রোববার ভোরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকরা,স্থানীয় প্রশাসন,জনপ্রতিনিধি গন সচেতনতামূলক প্রচারনা, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির মাইকিং করে জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বার বার বলার পরও পক্ষিয়া ইউনিয়ন ছাড়া অন্য ইউনিয়নের কোন মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে পারেনি।  প্রশাসনের সব ধরণের প্রস্তুতি নিলেও আশ্রয়কেন্দ্রগুলো এখনও খালি পড়ে আছে। শনিবার (১৩ মে) রাত থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়লেও কোনোভাবে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়ণে যেতে চাচ্ছেন না স্থানীয়রা।
বড় মানিকা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, তার ৫,৬,৮নং ওয়ার্ডের প্রায় ৫ হাজার মানুষের বসবাস বেড়িবাঁধের বাইরে।যারা এখনও আশ্রয় কেন্দ্র আসেনি। টবগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, ৪ও৫ নং ওয়ার্ডের ৩ হাজার ৫শত হাসান নগর ইউনিয়নের আবেদ চৌধুরী বলেন,তার ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের ১২শত লোক বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাস। জলোচ্ছাস হলে সবার আগে বড় রকম সমস্যায় পড়বেন তারা। অন্যদিকে পক্ষিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন সদ্দার বলেন,তার ১,৩,৬ নং ওয়ার্ডের ৪ হাজার লোক বেড়িবাঁধের বাহিরে।যদিও শনিবার রাত ৫শত লোক আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। অন্যদিকে মেঘনা- তেতুঁলিয়ার উপকূলে অবস্থিত বড় মানিকা,পক্ষিয়া,হাসাননগর,টবগী ও গংগাপুর ইউনিয়নে জনসংখ্যা প্রায় ১লাখ ৪০ হাজার।

বড় মানিকা ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার রফিকুল ইসলাম বলেন, এখানকার মানুষজন প্রতিনিয়ত ঝড়- ঝঞ্জার সাথে লড়াই করে বেঁচে আছে। তাদের মধ্যে ভয় কম। রুহু শক্ত হয়ে গেছে। এসব কারণে হয়তবা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছে না।
জেলে আবুল কালাম,রহমান,আসলাম,ইদ্রিস জানান, সারা বছর ঝড়-তুফানসহ নানা প্রতিকুল পরিস্থিতি উপেক্ষা করে নদী ও সাগরে গিয়ে মাছ ধরেন। এখন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ায় তাঁরা উপকূলে বাড়িতে নিরাপদে রয়েছেন। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে তেমন লাভ নেই। তা ছাড়া সেখানে গিয়ে গাদাগাদি করে থাকতে হবে মনে করছেন তাঁরা।’

হাসাননগর এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ‘৬৫ বছর বয়সে কত ঘূর্ণিঝড় দেখেছি, এসবে আমরা ভয় পাই না। ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে, ঘরে তো কিছু থাকবে না। সব লুট হয়ে যাবে।
পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুরু, দোকানদার রফিক বলেন,অনেক পরিবার গরু,ছাগল,হাঁস মুরগী পালন করেন। বাড়িতে থেকে পাহারা দিয়ে গরু চুরি ঠেকানো যায়না। আশ্রয়ন কেন্দ্রে গেলে চোরচক্র এ সুযোগ হাতছাড়া করবে না।

মেঘনার উপকূলবর্তী এলাকার কয়েকজন নারী বলেন, ‘আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বসবাসের জন্য নারীদের জন্য ভালো ব্যবস্থা নেই। নিরাপত্তা নেই, তাই ঘরেই ভালো। পানি না ওঠা পর্যন্ত আমরা বাড়িতে আছি।’
৭ হাজার ধারণ ক্ষমতা সম্পূর্ন মির্জাকালু সিনিয়র মাদরাসার অধ্যক্ষ মাও: নুরন্নবী বলেন,এখন পর্যন্ত এ কেন্দ্রে একজন লোকও আসেনি।মারাত্মক পরিস্থিতি না হলে এখনকার লোকজন আসবে না।
বোরহানউদ্দিন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর (সিপিপি) সহকারি পরিচালক ( অ. দা) মো: মেছপা উর রহমান বলেন,আসলে এখনাকার মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করে না।তাছাড়া আবহাওয়ার অস্বাভাবিক হলে লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে আসতো।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির কর্মসূচীর (সিপিপি) উপজেলা টিমলিডার শাহজাহান হাওলাদার বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে উপজেলার সর্বত্র সিপিপির সদস্যরা কাজ করছেন। প্রতিটি এলাকায় সিপিপির সদস্যদের সহায়তায় জনগনকে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সর্তক করে জানমাল ও গবাদিপশুর নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে আবহাওয়া তেমন খারাপ না হওয়া ও মেঘনা স্বাভাবিক থাকায় লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে আসছেন না। পউপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদেরকে দূর্যোগকালীন সময়ে নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।তবে মেঘনার পাড়ের জনৈক বাসিন্দা জানান,কিছু জেলে নদীতে মাছ শিকারে গেছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সোহেল হোসেন বলেন, ১৬০ টি সাইক্লোন সেন্টারও ১ হাজার ২৬০ জন স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের দিক পরিবর্তন করা ও আবহাওয়া তেমন খারাপ না হওয়ায় হয়তো তারা আশ্রায়ন কেন্দ্রে উঠছেন না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নওরীন হক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় আমাদের সর্ব রকম প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলায় একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। জনপ্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও ভিডিপি এবং গ্রাম পুলিশের সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন।