আত্নপ্রত্যয়ী জেলে নাছিরের গল্প

জেএম মমিন:
নাছির মাঝি । পেশায় একজন জেলে। ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে তার বসবাস । অভাব যার নিত্যদিনের মেহমান। পেট নামক নরমুদের অগ্নিগর্ভের একমাত্র জ্বালানী নদীতে শিকারকৃত মাছ। নদীতে মাছ পাওয়া, না পাওয়ার উপর যার জীবিকা নির্ভর করে। একটি নৌকা সাথে ৫ জন ভাগী নিয়ে মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার করেন। ইলিশ আকালের এ দিনে যে অর্থ উপার্জন করেন তা দিয়েই চলে অভাবের সংসার।
কিন্তু বছরের কিছু নিদ্দিষ্ট সময়ে নদীতে মাছ ধরার উপর থাকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। এ সময় সংসারে নেমে আসে চরম অশান্তি। এমন অশান্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রতিনিয়তই খুজে বেড়ান বিকল্প কর্মসংস্থান। যাতে নিষিদ্ধ সময়ে তার উপর ভর করে সংসার চলে।
একজন সাধারণ জেলে হয়ে তিনি ওই এলাকার একটি ইলিশ সংরক্ষণ কমিটি দলের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইউএসএআইডির অর্থায়নে, ওর্য়াল্ডফিস ও কোস্ট ট্রাস্ট এর সহায়তায় মৎস‍্য অধিদপ্তরের বাস্তবায়ধীন ইকোফিশ প্রকল্পের তত্বাবধানে ইলিশ সংরক্ষণ দলের নিয়মিত ও ধারাবাহিক সভা আয়োজন করেন তিনি। তিনি আরও জানান,বর্তমান সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার নাজমুস সালেহীন আমাদের নিয়ে মা ইলিশ না ধরার জন্য অনেক মিটিং করেন।আসলে তার পরিশ্রম আর চেষ্টা আমাদের কে এ বিষয়ে সচেতন করেন।
ইলিশ সংরক্ষণে নিষিদ্ধকালীন সময়ে প্রত্যেকটি সদস্যের বাড়ী, বাড়ী ও স্থানীয় মাছ ঘাটে গিয়ে জেলেদেরকে মা ইলিশ রক্ষার সুফল সম্পর্কে এবং নিষিদ্ধকালীন সময়ে নদীতে মাছ না ধরতে বুঝিয়ে থাকেন।
নাছির মাঝি বলেন, এক সময় আমি জানতাম না যে, মা ইলিশ রক্ষা করলে আমাদেরই উপকার হয়। এতে আমারাই লাভবান হব। এখন আমি এ সম্পর্কে জানি, এবং আমার এলাকায় মা ইলিশ রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছি । নিষিদ্ধকালীন সময়ে আমি ও আমার দলের কোন সদস্যরা নদীতে মাছ ধরতে যায় না। আমি ও আমার দলের সদস্যরা মিলে অন্য সব জেলেদেরকে সরকারি আইন মেনে নদীতে মাছ ধরতে সভা সমাবেশ করে থাকি। নদীতে মাছ শিকারে নিষিদ্ধকালীন সময়ে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে কোস্ট ট্রাস্টের মাধ‍্যমে বাস্তবায়নাধীন মৎস‍্য অধিদপ্তরের ইকোফিশ প্রকল্প থেকে পাওয়া একটি ছাগল ও নিজস্ব তিনটি গরু লালন-পালন করছি। শুধু আমি নই, কোস্ট ট্রাস্টের মাধ‍্যমে বাস্তবায়নাধীন ইকোফিশ প্রকল্পের সহায়তায় অন্য সব জেলে সদস্যরা একটি করে ছাগল পেয়েছে । ইতি পূর্বে বিভিন্ন শাক-সবজির বীজ পেয়ে তা চাষ করে বাজারে বিক্রি করে এখন আমি ও আমার দলের সদস্যরা অনেকটাই সাবলম্বী । আমি পেঁপেঁ,জালি কুমরো,পুইঁশাক, ডাটাশাকসহ বিভিন্ন রকমের শাক সবজি চাষ করছি। এমন বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়াতে আমি ও আমার দলের সদস্যরা এখন আর নিষিদ্ধকালীন সময়ে নদীতে মাছ ধরতে যাই না। আমরা এখন সচেতন। আমরা চাই দেশের সকল জেলেরা যেন নদীর আইন মেনে চলে ও মা ইলিশ রক্ষা করতে এগিয়ে আসে। পাশাপাশি আমাদের মতো সকল জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়।